বিশ্ব মা দিবস আজ

প্রধান সংবাদ বাংলাদেশ

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দের নাম— মা। মমতার খনি যাকে বলা হয় তিনি হলেন মা। শৈশব থেকে আনন্দ—বেদনা—ভয় কিংবা উদ্দীপনা— প্রতিটি মানবিক অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকে মায়ের নাম। মা ও সন্তানের আত্মিক বন্ধন নিয়ে রচিত হয়েছে বহু গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস। সৃষ্টি হয়েছে বহু কালজয়ী শিল্পকর্ম। এমনকী মনীষীরাও বলেন, একজন সন্তান জন্মের পর থেকে আমৃত্যু যার ছায়ার পরশে জীবনকে বেঁধে রাখেন তিনি হলেন মা। মায়ের সমার্থক শব্দ গুনে শেষ করা যাবে না। কিন্তু ‘মা’ এর চেয়ে মধুর ডাক পৃথিবীতে আর কিছু নেই।

কবির ভাষায়— ‘আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;—সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,/আমাদের মা ছিলো ধানখেত— সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।/আমাদের মা ছিলো দুধভাত—তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।/আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর—আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম…।’

আহা, মা! মাগো! সন্তানের শেষ আশ্রয় মহীয়সী এই মাকে আজ আলাদাভাবে স্মরণ করার দিন। আজ মায়েদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর, ‘ভালোবাসি’ বলার বিশেষ দিন— বিশ্ব মা দিবস আজ। পৃথিবীর নানা দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপিত হবে।

মা দিবসের উদ্দেশ্য হলো— সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আপন নিবাসের ঠিকানা খুবই কম। মায়েদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই এই দিবস। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শুরু হয় মা দিবসের প্রচলন। যদিও প্রাচীন গ্রীক ও রোমানদের মধ্যেও মাকে সম্মান জানাতে বিশেষ দিবসের প্রচলন ছিল বলে জানান ইতিহাসবিদরা।

মাকে কার না মনে পড়ে? যার আছে সেও মনে করে, আবার যার নেই সেও মাকে মনে করে। মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কটাই এমন। ‘মা’ কেবল একটি শব্দে মায়া, মমতা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং ত্যাগের অনন্য নজিরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পৃথিবীর প্রতিটি সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়স্থল মা। মায়ের সারাজীবনের শ্রমের মূল্য কোনও কিছুর বিনিময়ে কখনও শোধ করা যায় না। মায়ের জন্য বিশেষ দিন থাকার দরকার আছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু একটি বিশেষ দিনে মাকে না হয় একটু বেশিই ভালোবাসা যায়।

মা দিবস উদযাপনের পেছনের ইতিহাস স্মরণ করলে জানা যায়, মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষক অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির কথা ভেবেছিলেন। অ্যানা জারভিসের সেই ভাবনা বাস্তবায়নের আগেই ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মায়েদের জন্য উৎসর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।

বিশ্বের ৩৭টিরও বেশি দেশে মা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, বারবাডজ, বাহামাস, কানাডা, কলোম্বিয়া, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, সিঙ্গাপুর নিউজিল্যান্ডসহ অন্তত ২৭টি দেশে পালন করা হয়ে থাকে। এছাড়া, নরওয়েতে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় রবিবার, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, সার্বিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ মা দিবস পালন করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মা দিবস পালন করা হয় ২১ মার্চ। এছাড়া, মে মাসের অন্যান্য দিন, জুন, আগস্ট, অক্টোবর এবং নভেম্বরেরও কয়েকটি দেশে মা দিবস পালন করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে খুব আয়োজন করে মা দিবস পালন করা না হলেও এদিনে বিশেষ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে। প্রতি বছরের মতো এবারও আজাদ প্রোডাক্টস রত্নগভার্ মায়েদের সম্মাননা দেবে। আজ সকালে ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ডক্টর শিরীণ শারমীন চৌধুরী। এছাড়া, বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে আলোচনা অনুষ্ঠান, র‌্যালিসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই মাকে এই দিনে বিশেষ উপহার দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ মাকে নিয়ে বাইরে খেতেও যান। সেজন্য মা দিবসে অনেক রেষ্টুরেন্টে বিশেষ ছাড়ও দেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *