সাত কার্যদিবসে ধর্ষণ মামলার রায়

প্রধান সংবাদ বাংলাদেশ

বাগেরহাটে শিশু ধর্ষণ মামলায় আবদুল মান্নান সরদার (৫০) নামে এক আসামিকে সাত কার্যদিবসে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ সময় আসামিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

বাগেরহাটের মোংলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় পিতৃহীন সাত বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষণের অভিযোগে আসামি আবদুল মান্নান সরদারকে (৫০) সাত কার্যদিবসে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত ২-এর বিচারক মো. নূরে আলম।

সোমবার দুপুর ১২টায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত ২-এর বিচারক মো. নূরে আলম আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

আসামি আবদুল মান্নান সরদার মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার প্রয়াত আহম্মদ সরদারের ছেলে।

এর আগে রোববার বিকাল পর্যন্ত এ মামলার বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শোনেন বিচারক। এরপর তিনি আজ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

বাগেরহাটের স্পর্শকাতর একটি ফৌজদারি মামলায় এত কম সময়ে বিচারকাজ শেষ করার নজির বাংলাদেশে এই প্রথম।

এদিকে বাগেরহাটের বিচার বিভাগ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলার বিচারকাজ কম সময়ের মধ্যে শেষ করে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে নারী উন্নয়ন ফোরাম।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে বিচারকার্যের যে দীর্ঘসূত্রতা ছিল বা সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার না পাওয়ার যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল, তা অনেকাংশে দূর হবে বলে মত তাদের।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয় প্রকল্প এলাকায় পিতৃহারা সাত বছর বয়সী এক শিশু তার মামার কাছে মানুষ হচ্ছিল।

গত ৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে চারটা দিকে ওই আশ্রয় প্রকল্পের পঞ্চাশোর্ধ প্রতিবেশী আবদুল মান্নান সরদার শিশুটিকে বিস্কুট খাওয়ার প্রলোভন দিয়ে নিজের ঘরে ডেকে নেয়। এরপর শিশুটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে মান্নান।

পরে এই ঘটনা জানাজানি হলে ওইদিন রাতেই মেয়েটির মামা মোংলা থানায় আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিত মুখার্জ্জী তার তদন্তে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ১৬ জনকে সাক্ষী রেখে আটদিনের মাথায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে ১১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বেঞ্চ সহকারি (পেশকার) গোপাল চন্দ্র পাল বলেন, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় জুডিশিয়াল আদালত মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে পাঠায়।
আদালতের বিচারক গত ১১ অক্টোবর মামলাটি আমলে নিয়ে পরদিন চার্জ গঠন করে। ১৩ অক্টোবর বাদী পক্ষের মোট ১৬ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

১৪ অক্টোবর মামলার সংশ্লিষ্ট স্বাক্ষী চিকিৎসক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নারী পুলিশ সদস্য এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

১৫ অক্টোবর আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই স্বাক্ষী সাক্ষ্য নেন। রোববার বাদী বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের দিন ঘোষণা করেন। এই ধরনের ফৌজদারি মামলায় দেশের কোনো নিন্ম আদালতে কম সময়ে বিচারকাজ শেষ হয় নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারি কৌসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুষ্পষ্ট বলা আছে কোনও ধর্ষণের ঘটনার অভিযুক্ত সঙ্গে সঙ্গে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার হাতে ধরা পড়লে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

এই শিশু ধর্ষণের মামলাটি তারই প্রমাণ। মামলাটি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেছে। ঘটনার পরপরই আসামিকে গ্রেফতার, ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা, সাক্ষী হাজির এবং অভিযোগপত্র দাখিল যথা সময়ে করেছে পুলিশ। আইন মেনে ধর্ষিতা শিশুটির ২২ ধারা ও ১৬১ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।

রোববার টানা ৩ ঘন্টা বাদী বিবাদির যুক্তিতর্কের ওপর শুনানি শেষে সোমবার এই আলোচিত মামলার রায় ঘোষণার করা হয়। বিগত দিনে এতো কম সময়ে বাগেরহাট কি দেশের কোন আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোনও রায় ঘোষণা হয় নি বলেও জানান ওই আইন কর্মকর্তা।

সম্প্রতি দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন অস্বাভাবিকহারে বেড়ে গেছে। যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে দেশব্যাপী। এই সময়ে রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে যে বিচারহীনতা বা মামলার দীর্ঘসুত্রিতা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা রয়েছে তা অনেকটাই দূর হবে বলে মনে করেন তিনি।

নারী উন্নয়ন ফোরামের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক সমন্বয়কারি ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উন্নয়নকর্মী রিজিয়া পারভীন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সম্প্রতি বাগেরহাটের মোংলা দরিদ্র পরিবারের একটি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করেছে।

এই রায়ের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যের যে দীর্ঘসূত্রিতা ছিল বা সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার না পাওয়ার যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল তা অনেকাংশে দূর হবে। দেশের সকল আইন প্রয়োগকারি সংস্থা নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে বলে মত দেন এই নারী নেত্রী।❐

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *