মেমোরিয়াল ডে: আমরা যেন তোমাদের না ভুলি

কথকতা

  শাহ্ জে. চৌধুরী


আমেরিকায় অনেক দিবসের মতো আরও একটা বিশেষ দিবস আছে। দিবসের নাম মেমোরিয়াল ডে। বাংলা করলে মানেটা দাঁড়ায় স্মরণ দিবস।যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্রবাহিনীর যেসব সদস্য কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতেই ১৮৬৮ সাল থেকে নিয়মিতভাবে পালিত হয়ে আসছে মেমোরিয়াল ডে।  সামরিক বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেসব নারীপুরুষ মারা গিয়েছিলেন- তাঁদের স্মরণ করতেই এই দিনটিকে উৎসর্গ করা হয়েছে।

এই সন্মান জানাবার মধ্য দিয়েই উদযাপিত হয় স্মরণ দিবস। আসলে এই উদযাপন অনেক বেশি ব্যাপক ও অর্থবহ। জীবন উৎসর্গ করা সকল সৈনিক পরিবারকে আমেরিকানরা খুব সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন। মেমোরিয়াল ডে’তে পরিবারের সদস্যরা সমবেত হন হারানো স্বজনের সমাধির সামনে। যারা জীবন দিয়েছেন, সেসব বীরদের সম্পর্কে জানতে অন্যদের জানাবেন। স্যালুট দিয়ে সম্মান জানাবেন। চাইলে ছবির নিচে কিছু লিখতেও পারবেন।

মেমোরিয়াল ডে পালনের জন্যে কোনো তারিখ নির্দিষ্ট করা নেই। তবে নির্দিষ্ট দিন আছে। দিনটি হলো মে মাসের শেষ সোমবার। আজকের দিনটিই, সোমবার, ৩০ মে। আমেরিকায় এ দিনটি জাতীয় ছুটির দিন।

১৯৭১ সালে কংগ্রেস মেমোরিয়াল ডে উপলক্ষ্য করে জাতীয় সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেছিল। শুরুতে মেমোরিয়াল ডে’র পরিচিতি ছিল ‘ডেকোরেশন ডে’ নামে। পরে ‘ডেকোরেশন ডে’র নাম বদলে নতুন নাম হয় মেমোরিয়াল ডে। আমেরিকায় মেমোরিয়াল ডে থেকে বেসরকারি ভাবে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়।

মহামারির কারণে গেল দু বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর ওয়াশিংটনের কন্সটিটিউশন অ্যাভিনিউয়ে মেমোরিয়াল ডে প্যারেড হবে। আমেরিকানরা যুদ্ধের স্মৃতিসৌধ দেখতে যাবেন, যাদের স্মৃতিতে আজকের দিন, তাঁদের সমাধিতে ফুল দেবেন।

মেমোরিয়াল ডে’র জন্যে যে কেউ ফুল কিনতে নগদ অর্থ দান করতে পারবেন। জর্জিয়া ও আটলান্টায় বহু জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ আছে। সেখানে কর্তৃপক্ষকে ফুল কেনার অর্থ দিলে তারা নিজ দায়িত্বে ফুল কিনে স্মৃতিস্তম্ভগুলোতে সাজিয়ে দেবে। প্রবীণ ও জীবিত সৈন্যদের বাড়িতে ফুলের তোড়া পাঠাতে পারবেন। আর নিজের বাড়িটিকেও ফুল দিয়ে সাজাতে পারবেন। সাধারণত লাল, সাদা ও নীল ফুল প্রাধান্য পায়। কেননা এই তিনটি রঙ আমেরিকার জাতীয় পতাকার রঙ।

ওয়াশিংটনে আরেকটি আয়োজন হয়। খবরের কাগজে দেখেছি, সে শহরের মোটরসাইকেল চালকরা মেমোরিয়াল ডে পালনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছেন। তাঁরা দলবেঁধে আপনাপন মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। মোটরসাইকেল চালকদের এই আয়োজনেও আলাদা নাম আছে- ‘রোলিং টু রিমেম্বার’। সামরিক বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতেই রোলিং টু রিমেম্বারের আয়োজন।

রোলিং টু রিমেম্বার তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, আমেরিকার সামরিক বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্তদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিখোঁজ ৮২ হাজার সামরিক সদস্যদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতেই তাঁদের এই আয়োজন।

বাংলাদেশ নির্মাণে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে আমরা বলি, আমরা তোমাদের ভুলবো না। আমেরিকার জন্যে যারা প্রাণ দিয়েছেন আমেরিকানরাও তাঁদের ভুলে যান নি। মেমোরিয়াল ডে-কে এখন অনেকেই আমেরিকায় গ্রীষ্মের প্রথম দিন হিসেবে বিবেচনা করেন।

গ্রীষ্মের প্রথম দিনে এদেশটির জন্যে যারা প্রাণ দিয়েছেন, দেশ রক্ষায় যারা জীবনকে বিপন্ন করেছেন, উৎসর্গ করেছেন- তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধা। আমরা যেন তোমাদের না ভুলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *