মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই চ্যালেঞ্জ

অর্থনীতি বাংলাদেশ

দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জে রয়েছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বল কর কাঠামো। করোনার প্রভাবে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ।

এ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, রাজস্ব আদায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আনুপাতিক হারে বিশ্বে সর্বনি¤œ। এজন্য বাংলাদেশে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে না পারলে ব্যয় বাড়ানো কঠিন হবে। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে অবকাঠামো, জ্বালানি ও সামাজিক নিরাপত্তা অন্যতম। যেহেতু আমরা বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাচ্ছি, সে কারণে রাজস্ব না বাড়লে ব্যয় বাড়ানো সম্ভব হয় না। এজন্য রাজস্ব বাড়ানোর একটি দিকনির্দেশনা বাজেটে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমদানির মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। যদিও রপ্তানি বেড়েছে, তবে তা আমদানির তুলনায় অপ্রতুল। অন্যদিকে প্রবাসী আয় কমেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অপ্রয়োজনীয় আমদানি বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদনের শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করা যাবে না।

দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মির্জ্জা আজিজ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুসারে এপ্রিলে এ মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ ছিল। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে মূল্যস্ফীতির পেছনে কিছু আন্তর্জাতিক কারণ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কতটুকু কমানো যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ বিশ্ববাজারের ওপর আমাদের কোনো হাত নেই। এক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়িয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এর আওতায় আনতে হবে।

আয় বাড়ানোর জন্য সরকারের পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে মির্জ্জা আজিজ বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের জন্য আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দক্ষতা বাড়াতে হবে। কিন্তু প্রতি বছর দেখা যায়, আয়-ব্যয়ের যে লক্ষ্য থাকে, সংশোধিত বাজেটে তার চেয়ে কমানো হয়। বাস্তবায়ন হয়, তার চেয়ে আরো কম। ভ্যাটের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এরই মধ্যে যারা করের আওতায় এসেছেন, তাদের কর নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়াতে হবে।

বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, গত দশক পর্যন্ত বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির আনুপাতিক হারে ২২-২৩ শতাংশের মধ্যে স্থবির আছে। এটি বাড়ানো জরুরি। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস (সহজে ব্যবসা করা সংক্রান্ত) সূচকে উন্নতি করতে হবে। বর্তমানে এখানে আমাদের অবস্থান ১৬৮ নম্বরে। যদিও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তার সুফল আমরা এখনো পাইনি। দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো জরুরি। মাথাপিছু আয় বাড়লেও বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য দূর করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে যেসব দেশে অর্থ পাচার হচ্ছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া উচিত। এছাড়াও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া বন্ধ করা উচিত। কারণ একবার সুযোগ দিলে তারা বারবার চায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *