বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বছরে জনপ্রতি ২৫৪ কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে বাংলাদেশ: গবেষণা

নিসর্গ বাংলাদেশ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গ্রীষ্মকাল এলেই সারাদিন ধরে চড়তে থাকে উত্তাপ ও আদ্রতা। প্রচণ্ড গরমে সহজেই পরিশ্রান্ত হচ্ছে মানুষ, ফলে প্রতিবছর বাংলাদেশ জনপ্রতি ২৫৪ কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।

বর্তমান তাপমাত্রা অনুসারে বাংলাদেশের বার্ষিক ক্ষতি ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা আরো ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লে এ ক্ষতি ২১ বিলিয়নে উন্নীত হবে বলে তারা জানিয়েছেন।

“শ্রমে বর্ধিত ক্ষতি এবং উষ্ণায়িত বিশ্বে অভিযোজনশীলতা হ্রাসের সম্ভাব্যতা” শীর্ষক এ গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়েছে, গড় তাপমাত্রা বর্তমানের তুলনায় আরো ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লে; উৎপাদনশীলতা কমার এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে মোট ক্ষতি হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার।

গবেষণার প্রক্ষেপণ অনুসারে, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হবেন- এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার কর্মীরা।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির স্তর হিসাবে এখানে ক্ষতির নানান হিসাব দেওয়া হয়েছে।

গড় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লে বৈশ্বিক গড়ে প্রতিবছর জনপ্রতি ১৩৪ কর্মঘণ্টা কমবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হতে পারে ৩৯১ ঘণ্টা।

এ হিসাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লে বার্ষিক জনপ্রতি কর্মঘন্টা কমবে ৫৭৩ ঘণ্টা। এতে বার্ষিক ক্ষতি ২৮ থেকে ৩১ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

ক্ষতির সিংহভাগ ভারবহন করবে আমাদের মতো স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলো। যাদের কৃষি ও নির্মাণ শিল্প মানব শ্রম নির্ভর। তবে তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লে, বিশেষ চেষ্টার মাধ্যমে বড়জোর ৩০ মিনিট কর্মঘণ্টা হারানো রোধ করতে পারবে বাংলাদেশ।

ক্রান্তীয় ও আধা-ক্রান্তীয় অঞ্চলে সকাল বেলায় তাপদহ বাড়লে এই অভিযোজনের চেষ্টাও খুব একটা কাজে আসবে না।

গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু গবেষক লিউক পারসনস বলেন, “বর্তমান ও ভবিষ্যতে সবচেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা হারাতে চলা বেশিরভাগ দেশই বায়ুমণ্ডলে সিংহভাগ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করেনি। তবে আরো সকালে কাজের সময় এগিয়ে নিলে ৩০ শতাংশ কর্মঘণ্টা হারিয়ে যাওয়া রোধ করা সম্ভব। কিন্তু, বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতি এক ডিগ্রী বাড়ার সাথে সাথে শ্রমিকদের এভাবে মানিয়ে চলার ক্ষমতাও দ্রুত কমতে থাকবে। তখন দিনের সবচেয়ে শীতল সময়টিও হবে ঘরের বাইরে কাজের জন্য অসহনীয়।”

পারসনস ও তার সহকর্মীদের গবেষণাটি গেল ১৪ ডিসেম্বর নেচার কমিউনিকেশন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে বিশ্বের প্রতিটি দেশের কর্মঘণ্টা হারানোকে গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ৪ ডিগ্রী পর্যন্ত বৃদ্ধি অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *