নিউইয়র্কে ড. শামসুজ্জোহা স্মরণে শিক্ষক দিবস করার দাবি

প্রবাস
তোফাজ্জল লিটন, নিউ ইয়র্ক থেকে: ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহার ৫১তম বার্ষিকী। এই দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য নিউইয়র্ক থেকে আবারও দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশন, যুক্তরাষ্ট্র।
 
১৬ ফেব্রুয়ারি জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা এই দাবি জানান।
 
সংগঠনের আহবায়ক ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাব্বীর সভাপতিত্বে, নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আসলাম আহমাদ খান ও নূরুন নাহার গিনির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সাবেক কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রাকসুর প্রথম নির্বাচিত জিএস আব্দুর রাজ্জাক খান।
 
আব্দুর রাজ্জাক খান প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুজ্জোহার জীবনী পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্তি করার জোড় দাবী জানিয়ে বলেন, যেভাবে দেশের জন্য, ছাত্রদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তা ইতিহাসে বিরল। তাঁর আত্মত্যাগ এবং জীবনাদর্শ আমাদের আগামী প্রজন্মকে জানাতে হবে। তাঁর মৃত্যুর দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি করছি।
 
বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান ও সাপ্তাহিক বাঙালী পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ।
 
সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক সাংবাদিক জাকিয়া খান, সংগঠনের সাবেক সভাপতি আলী হাসান কিবরিয়া অনু, সাবেক জাতীয় এ্যাথলেট সাইদুর রহমান ডন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাইয়ের সাবেক সভাপতি আখতার আহমেদ রাশা, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ ফিলিপ, রাকসুর সাবেক ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক মুজাহিদ আনসারী ।
 
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা অসীম ব্রক্ষ্যচারী, সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর বিপ্লব। সংগঠনের নব নির্বাচিত সভাপতি একেএম মনিরুল হক রাহুল, সহ-সভাপতি ফতেনূর আলম বাবু , সংগঠনের সাবেক সদস্য সচিব ও বর্তমান কমিটির সহসভাপতি নূরুন নাহার গিনি, অধ্যাপক রেজাউল করিম।
 
আলভান চৌধুরীর নেতৃত্বে উপস্থিত  সকলে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
 
মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং একই বছর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের লেকচারার পদে যোগদান করেন।
 
১৯৬৬ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৫ সালে তিনি শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষক এবং ১৯৬৬ সালে প্রাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালের ১ মে থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেন।
 
মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ছিলেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯-এর ভেতরে প্রথম শহীদ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে তিনি আন্দোলনকামী জনতার বিজয় অনিবার্য করেছেন।
 
১৯৬৮ সালের শেষ দিক থেকে আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন দানা বাঁধে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানী বাহিনী ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানকে হত্যা করে এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিহত হন তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক।
 
এসব হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশি হামলায় বহু ছাত্র আহত হয়।
 
পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। স্থানীয় প্রশাসন ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কে ১৪৪ ধারা জারি করে।
 
বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সামরিক বাঁধা উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ড. জোহা অকুস্থলে ছুটে যান এবং উত্তেজিত ছাত্রদের ডরমিটরিতে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালান। তিনি সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালানোর অনুরোধ করেন। তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করে সেনাবাহিনী মিছিলে গুলিবর্ষণ করে এবং ড. জোহা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান।
 
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পূর্বে ড. জোহা তাঁর ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমি বলছি গুলিবর্ষণ হবে না। যদি গুলি করা হয় তবে কোন ছাত্রের গায়ে লাগার আগে তা আমার গায়ে লাগবে। ড. জোহা তাঁর কথা রেখেছিলেন।
 
তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাহিত করা হয। তাঁর মৃত্যু আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে।
 
ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে সমগ্র দেশে বিক্ষোভের জোয়ার প্রবাহিত হয় এবং এর ফলে আইয়ুব সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশের জন্য শামসুজ্জোহার সর্বোচ্চ ত্যাগের সম্মানে তাঁর নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নামকরণ করে জোহা হল।
 
 
 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *