বিদায় নিয়েছেন বহুল বিতর্কিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে ইতোমধ্যেই শপথ নিয়েছেন জো বাইডেন। শপথের পর তিনি ভাষণে বলেছেন পরিত্রাণের কথা, বলেছেন ঐক্যের কথা। কিন্তু সেই ঐক্য কতটা বাস্তব ট্রাম্প পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রে।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে সকালে ওয়াশিংটন ডিসির সেন্ট ম্যাথিউ ক্যাথেড্রালে প্রার্থনায় অংশ নেন নবনিবার্চিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন।
সকালে এক টুইটে বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকার জন্য নতুন দিন।’
আসলেই কি সেই নতুন দিন আসবে? তা নিয়ে সংশয় আরও বেড়েছে ট্রাম্পের সবশেষ বক্তব্যে।
জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে প্রথা ভেঙে স্থানীয় সময় বুধবার ভোরে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হোয়াইট হাউস থেকে জয়েন্ট বেজ অ্যান্ড্রুজে যান। সেখানে তার জন্য ছোট পরিসরে একটি বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আপনাদের জন্য সব সময় লড়াই চালিয়ে যাব। আমি নজর রাখব, আমি শুনব এবং আমি বলব, এই দেশের ভবিষ্যৎ এর চেয়ে ভালো কখনো হবে না।’
ট্রাম্প আমলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ছিল টালমাটাল। কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শুরু, এরপর ওবামাকেয়ার বাতিল, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর অভিবাসন প্রত্যাশীদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে বাধা, সরকারে অচলাবস্থা তৈরি, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের উসকে দেওয়া এবং উগ্র ডানপন্থাকে সমর্থনের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প আমেরিকান সমাজকে অনেকটা বদলে দিয়েছেন।
ভোটের হেরে গিয়ে কারচুপির অভিযোগের পর ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া নিয়ে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলার সময় ট্রাম্প সমর্থকরা সেখানে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালায়। সংঘর্ষে এক পুলিশস পাঁচজন নিহত হন।
ক্যাপিটলের ওই ঘটনার পরই দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হয়ে ট্রাম্প গড়েন অসম্মানজনক প্রস্থানের নতুন নজির। প্রথমবার ট্রাম্প অভিশংসিত হয়েছিলেন ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে।
এবার ক্যাপিটল হিলে হামলায় ‘উস্কানি’ দেওয়ার অভিযোগে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পকে ফের অভিশংসিত করে তার নাম তুলে দেয় ইতিহাসের পাতায়।
ইতিহাসবিদরা তার প্রেসিডেন্সি নিয়ে লিখতে গেলে ক্যাপিটলে হাঙ্গামার প্রেক্ষাপট তো আসবেই, সঙ্গে আসবে শার্লটভিলে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের হামলাসহ ডানপন্থি উগ্রবাদীদের সহিংস উত্থানের কথা।
জো বাইডেনের ভাষণও তাই পাল্টে গেল বলতে হয়। শপথ অনুষ্ঠানের ভাষণে তিনি বারবার বলেছেন ঐক্যের কথা। বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য।
তবে অবশ্যই তাকে মোকাবিলা করতে হবে ট্রাম্পের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে। ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে চলে গেলেও ট্রাম্পবাদ মোকাবিলায় বাইডেন প্রশাসন কতটা সফল হবেন সেই প্রশ্নই এখন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে জ্বল জ্বল করছে। ফলে আপাতত বলা যাচ্ছে না যে, নতুন দিনে প্রবেশ করল যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেনের মনে নিশ্চয় ঘুরে বেড়াবে ট্রাম্পের বিদায়ী বক্তব্যের কথাগুলো, ‘সবাইকে বিদায়। আমরা আপনাদের ভালোবাসি। আমরা আবার অন্য কোনওভাবে ফিরে আসব।’❐