অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট ভবনেই ধর্ষণ!

আন্তর্জাতিক

ঘটনার তিন বছর পর অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট হাউসে ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন এক তরুণী। এই অভিযোগ হতবাক করে দিয়েছিল বিশ্বকে। এবার দেশটির একটি দেওয়ানি আদালত ২০২১ সালে করা ওই অভিযোগটির সত্যতা পেয়েছেন।

এ বিষয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটানি হিগিন্স নামের ওই তরুণী ধর্ষণের অভিযোগটি করেছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ব্রুস লেহরম্যানের বিরুদ্ধে। তবে ব্রুস ওই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ব্রিটানি তাঁর ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগটি যেখানে করেছিলেন সেই নেটওয়ার্ক টেন টেলিভিশন এবং সেদিনের উপস্থাপিকা লিসা উইলকিনসনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন ব্রুস। তবে নেটওয়ার্ক টেন ওই অভিযোগটিকে শুরু থেকেই সত্য দাবি করে আসছিল। এর ফলে বিষয়টি সাধারণ মানুষের মাঝেও ক্ষোভের জন্ম দেয়।

আজ সোমবার অস্ট্রেলিয়ার একজন বিচারক ধর্ষণের বিষয়টি সত্যিই ঘটেছিল বলে রায় দিয়েছেন। রায়ে হিগিন্সকে ধর্ষণের পর ব্রুস লেহরম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

নেটওয়ার্ক টেন টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অশ্রুসিক্ত হিগিন্স বর্ণনা করেছিলেন—২০১৯ সালে কীভাবে এক মন্ত্রীর অফিসের সোফায় তাঁর চেতনা ফিরেছিল এবং চেতনা ফেরার পর শরীরের ওপর তিনি ব্রুসকে দেখেছিলেন। তবে ব্রুস লেহরম্যান দাবি করেন, সেদিন রাতে তাঁরা দুজন ক্যানবেরায় মদ্যপানের পর নিজ নিজ পথে যাওয়ার আগে একটি উবার শেয়ার করে প্রথমে অফিসে এসেছিলেন।

এদিকে ব্রুস লেহরম্যানের মানহানির মামলাটি বাতিল করে দিয়ে এক রায়ে ফেডারেল কোর্টের বিচারপতি মাইকেল লি বলেছেন, তিনি ২৮ বছর বয়সী হিগিন্সের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের জন্য নারকীয় উপায় গ্রহণ করেছিলেন এবং এ বিষয়ে হিগিন্সের সম্মতি আছে কি না সেই বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। তবে অফিসে ফেরার সময় হিগিন্স মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপ ছিলেন বলেও মন্তব্য করেছেন বিচারক।

বিবিসি জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় এটি এমন একটি মামলার প্রথম আইনি রায়, যা বছরের পর বছর ধরে জাতিকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। এ ঘটনার সুবিচারের জন্য হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বলা হচ্ছে, নিজের করা মানহানির মামলার জের ধরেই অতীত অপরাধে ফেঁসে যাচ্ছেন ব্রুস লেহরম্যান। মানহানির বিচার শুরু করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিচারপতি লি বলেছেন, সিংহের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর মিস্টার লেহরম্যান তাঁর টুপির জন্য আবারও ফিরে এসে ভুল করেছিলেন।

পাঁচ সপ্তাহ ধরে এই বিচারে এক ডজনেরও বেশি সাক্ষীর কাছ থেকে সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এদের মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে ভাড়া করা একজন ‘ঠোঁট পাঠকের’ বিশ্লেষণ, হিগিন্সের মা-বাবা এবং পার্লামেন্টে ব্রুস ও হিগিন্সের সহকর্মীদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নেন আদালত।

রায়ের পর আদালতের বাইরে কথা বলার সময় নেটওয়ার্ক টেন আউটলেটের উপস্থাপিকা মিসেস উইলকিনসন বলেছেন, ‘আমি আজ অস্ট্রেলিয়ার নারীদের জন্য আনন্দিত বোধ করছি।’

এ বিষয়ে নেটওয়ার্ক টেন একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিচারপতি লির রায় সারা দেশের নারীদের কণ্ঠস্বর সাহসী ব্রিটানি হিগিন্সের পক্ষে এসেছে। এই রায়—সত্যের বিজয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *