অভিবাসীদের আশার গুড়ে বালি

প্রধান সংবাদ যুক্তরাষ্ট্র
কথায় বলে শেষ ভালো যার সব ভালো তার। শেষ ভালোতে ট্রাম্পের পাবলিক চার্জ আদেশ বহাল থাকল সুপ্রিম কোর্টে। অর্থাৎ নতুন অভিবাসী যারা এখানে এসে সরকারি সুবিধা ভোগ করবেন যেমন ফুডস্ট্যাম্প, মেডিকেইড এবং অন্যান্য সুবিধা ভোগকারী এদেশে গ্রিনকার্ড বা স্থায়ী অভিবাসী হওয়ার সুযোগ পাবেন না।
ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন বিরোধী যতগুলো নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল ওয়েলথ টেস্ট রুলস ফর ইমিগ্র্যান্টস (ইমিগ্র্যান্টদের সম্পদ যাচাই) ছিল তার অন্যতম। অবশ্য আইনটি প্রণয়নের পর বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে বিশেষত নিউ ইয়র্কের জনৈক ডিস্ট্রিক্ট জজ প্রদত্ত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কারণে জাতীয় পর্যায়ে আইনটির কার্যকারিতা স্থগিত থাকে। তবে আইনটি কার্যকর করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনও উঠেপড়ে লাগে। বিভিন্ন উচ্চ আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে এবং নিম্ন আদালতের রায়ের সপক্ষে মতামত দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়।
 
অবশেষে ট্রাম্প প্রশাসনের দাখিলকৃত জরুরি আবেদনের পটভূমিতে ২৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুমতি দিয়েছেন নতুন ওয়েলথ্‌ টেস্ট (সম্পদ যাচাই) আইনকানুন শুরু করতে। এর ফলে পাবলিক অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় (সর্বসাধারণের সাহায্য) বেনিফিট গ্রহণকারী ইমিগ্র্যান্টদের রেসিডেন্সি লাভ (গ্রিনকার্ড) কিংবা পাবলিক অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় বেনিফিট গ্রহণ করতে পারে অজুহাতে ভিসাপ্রার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ভিসার আবেদন নাকচ করার সহজ হবে। সমালোচকদের মতে নতুন আইনটির প্রয়োগ শুরু হলে ইংরেজি যাদের ভাষা নয় এমন সকল দেশের গরীব অভিবাসীদের জন্য এটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। তবে নিম্ন আদালতে লড়াই অব্যাহত থাকার কথাও অনেকে উচ্চারণ করেছেন।
 
সিনেটে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট ট্রায়ালের প্রেসিডেন্ট চীফ জাস্টিস জন জি রবার্টস জুনিয়র ট্রাম্প প্রশাসনের সপক্ষে ২৭ জানুয়ারি রায়টি দেন। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য কনজারভেটিভ জাস্টিস ক্লেয়ারেন্স থমাস, স্যামুয়েল এ এলিটো জুনিয়র, নীল এম গরসাচ এবং ব্রেট এম কাভানঘের সিদ্ধান্তের সাথে চীফ জাস্টিস রবার্টস জুনিয়র মতৈক্য পোষণ করায় এ পর্যায়ে নতুন আইন কার্যকরের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অপর দিকে লিবারেল জাস্টিস রুথ বেডার গিনসবার্গ, স্টিফেন জি ব্রীয়ার, সনিয়া সটোমেয়র এবং এলেনা কাগান এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। ইমারজেন্সি মোশনের রায় দানের ক্ষেত্রে অসাধারণ না হলেও বস্তুত কোনও পক্ষই যৌক্তিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দান করে নি। উল্লেখ্য, ইমারজেন্সি মোশনের রায় ঘোষণকালে রায়ের প্রতি মতৈক্য পোষণকারী কিংবা রায়ের প্রতি ভিন্নমত পোষণকারী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ বিশদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আদালতে উপস্থাপন করেন না।
 
নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রেটারি স্টেফানি গ্রিশাম এক বক্তব্যে বলেন, সরকারকে নতুন আইন কার্যকরের ক্ষমতা দিয়ে আদালত আমাদের সনাতনী ফেডারেল আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে আমেরিকায় নতুনভাবে আগমনকারী প্রত্যেককে অবশ্যই আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে। তাদেরকে আমাদের দেশ এবং নাগরিকদের জন্য পাবলিক চার্জ (বিশেষ সুবিধেভোগী) করা যাবে না।
নতুন আইন অনুসারে যাদেরকে বেনিফিটের জন্য আমেরিকা সরকারের উপর নির্ভরশীল (পাবলিক চার্জ) মনে করা হবে, আইনের ভাষায় তারা গ্রিনকার্ডের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে এবং নাগরিকত্ব লাভের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া নতুন নীতিমালা অনুসারে, আমেরিকার অভ্যন্তরে বৈধভাবে বসবাসকারী ইমিগ্র্যান্টরা মেডিকেইড, ফুড স্টাম্প এবং হাউজিং অ্যাসিস্ট্যাঞ্চ গ্রহণকারীদের সাসপেক্ট বা সন্দেহের তালিকায় আসবেন। ডগ্রনকার্ডের দরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাগণের নিকট নতুন ক্রাইটেরিয়া ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফ্যাক্টরস সরবরাহ করবে। নেতিবাচক ধারণাগুলোর মধ্যে থাকবে বেকারত্ব, হাই স্কুল থেকে ড্রপ আউট হওয়া এবং অনর্গল ইংরেজি বলতে না পারা। আর এটি গ্রিনকার্ডের আবেদনপত্র নাকচ করার ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে। আর নিজের কাছে কিংবা আমেরিকাতে পর্যাপ্ত আর্থিক সম্পদ না থাকলে ভিসা আবেদনকারীর আবেদন নাকচ করা হবে।
 
আইনটি প্রসঙ্গে আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এডেড ডেভিড লিয়োপল্ড বলেন, এ আইনটি বৈধ ইমিগ্রেশনের উপর চরম আঘাত। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সিনিয়র স্টাফ এটর্নী ক্লডিয়া সেন্টার বলেন, আইনটি অক্ষম আমেরিকানদের বৈষম্যের মুখে ঠেলে দিবে এবং হুইলচেয়ার বা শ্বাসযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল মেডিকেইডধারীদের ভয়াবহ শাস্তির মুখে ঠেলে দিবে। নিউ ইয়র্কের স্টেট এটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস বলেন, নতুন আইনটি শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলে আসা সংবিধিবদ্ধ আইনটিকে নির্বাসনে পাঠাবে। অবশ্য লেটিশিয়া আইনী চ্যালেঞ্জের হুমকি দিয়েছেন।
তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর ৫ লাখ ৪৪ হাজার ইমিগ্র্যান্ট গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করে থাকেন। সরকারের বর্ণনানুসারে, ৩ লাখ ৮২ হাজারকে নতুন রিভিউর আওতায় আনা হতে পারে।
 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *