গত ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা কূটনৈতিক টানাপোড়েনের অবসান ঘটাতে ভারত সফরে যাচ্ছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। প্রেসিডেন্টের প্রধান মুখপাত্র হিনা ওয়ালিদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তবে সফরের দিন-তারিখ এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। মঙ্গলবার রাজধানী মালেতে এক সংবাদ সম্মেলনে হিনা ওয়ালিদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে হিনা ওয়ালিদ বলেন, “আমাদের প্রেসিডেন্ট ভারত সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর এবং আপনারা জানেন যে এ ধরনের সফরের সময়সূচি দুই দেশের কর্মকর্তাদের আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত। সেই আলোচনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।”
এদিকে মঙ্গলবার যেদিন হিনা ওয়ালিদ প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর আসন্ন ভারত সফরের ঘোষণা দিয়েছেন, ওই দিনই দেশটির মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই মন্ত্রী মারিয়াম শিউনা এবং মালশা শরিফ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে অবমাননাকর মন্তব্য ও তাকে ‘ক্লাউন’ বলে উল্লেখ করায় গত প্রায় ৯ মাস ধরে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় থাকার পর মঙ্গলবার মোহাম্মদ মুইজ্জুর দপ্তরে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হন মোহাম্মদ মুইজ্জু, যিনি দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের সমর্থন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনের আগে দেশবাসীকে মুইজ্জু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি জয়ী হলে মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাদের অপসারণের ব্যবস্থা নেবেন। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পূরণও করেছেন।
তবে সমস্যা বাঁধে গত বছর ডিসেম্বরে। ওই মাসে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভ্রমণ শেষে ফিরে ভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দ্বীপটির কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন তিনি।
তার সেসব ছবি শেয়ারের পর পরই শোরগোল পড়ে যায় মালদ্বীপের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশটির সাধারণ নেটিজেনদের পাশাপাশি এতে জড়িয়ে পড়েন মালদ্বীপের কয়েক জন সরকারি কর্মকর্তা-মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। তাদের অভিযোগ, ভারতীয় পর্যটকরা যেন মালদ্বীপের পরিবর্তে লাক্ষাদ্বীপকে নিজেদের পর্যটনগন্তব্য হিসেবে বেছে নেন— ছবির মাধ্যমে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন মোদি।
তাদের অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে সরব হয়ে ওঠেন ভারতীয় নেটিজেনরাও। পর্যটন গন্তব্য হিসেবে মালদ্বীপকে বয়কটের ডাক দেন তার। এক্স, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বয়কটমালদ্বীপ’ হ্যাশট্যাগে রীতিমতো সয়লাব হয়ে যায়।
এবং তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মালদ্বীপের অর্থনীতিতে। এত দিন বিশ্বের যেসব দেশ থেকে পর্যটকরা মালদ্বীপে যেতেন, তাদের অর্ধেকই ছিলেন ভারতীয়; কিন্তু মালদ্বীপকে বয়কটের ডাক দেওয়ার পর চলতি বছর থেকে দেশটিতে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যায়। ফলে শুধুমাত্র পর্যটনখাত নির্ভর এই দেশটির অর্থনীতির মূলে আঘাত আসে।
মালদ্বীপের মন্ত্রিসভার ৩ জন সদস্যের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোদির উদ্দেশ্যে অবমাননাকার বক্তব্য পোস্ট করার অভিযোগ উঠেছিল এবং এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদেরকে জানুয়ারি মাসেই সাসপেন্ড করেছিলেন মোহাম্মদ মুইজ্জু। এই তিন সদস্য হলেন মারিয়াম শিউনা, মালসা শরিফ এবং মাহজুম মজিদ।
তাদের মধ্যে মারিয়াম এবং মালসা গতকাল মঙ্গলবার ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করলেও মাহজুম মজিদ এখনও পদত্যাগ করেননি।
সূত্র : এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড