রাশিয়াকে ‘প্রাণঘাতী সহায়তা’ দেবে না চীন : ব্লিনকেন

যুক্তরাষ্ট্র

চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংএর সঙ্গে বেইজিংয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়াকে কোনো ‘প্রাণঘাতী সহায়তা’ দেবে না চীন। বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেন আরো বলেন, ‘চীনের এ অঙ্গীকারের কথা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বার বার জানানো হয়েছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য দেশকেও।’

তবে ব্লিনকেন এ-ও বলেন, ‘চীনের কিছু বেসরকারি কম্পানির’ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন, যারা হয়তো কিছু সহায়তা দিচ্ছে, যার উদ্দেশ্য স্পষ্টতই ইউক্রেনে রুশ সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো।’

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শি এবং চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই, উভয়ের সঙ্গেই তার কথোপকথন ছিল ‘জোরালো’।

তাতে ‘ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসী যুদ্ধ’ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেন্টানিল সংকট পর্যন্ত সবই অন্তর্ভুক্ত ছিল।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং একে স্থিতিশীল রাখাা দুই দেশেরই দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন ব্লিনকেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে অর্থনৈতিকভাবে বোতলবন্দি করতে চাইছে না। তার কথায়, এ রকম কিছু করাটা মার্কিন স্বার্থের অনুকুল নয় এবং চীনের অর্থনৈতিক সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যে ‘বিশেষ কিছু প্রযুক্তিকে’ অবশ্যই আগলে রাখতে হবে।”

তাইওয়ান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এক চীন নীতিকে পুর্নব্যক্ত করে ব্লিনকেন বলেন, সেই নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না।

তিনি আরো বলেন, উত্তর কোরিয়াতে যা ঘটছে তা নিয়েও প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে তার কথা হয়েছে। উত্তর কোরিয়া যে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ বন্ধ করাসহ দায়িত্বশীল আচরণ করে, তার ব্যাপারে বিশ্বের দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে।

শিনজিয়াং, তিব্বত ও হংকংয়ে চীনের মানবাধিকার লংঘন নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন বলে ব্লিনকেন জানান।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখা প্রয়োজন উল্লেখ করে ব্লিনকেন বলেন, ‘চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা সংঘাতে পরিণত হোক এটা কাম্য নয়।’

‘অগ্রগতি হয়েছে’, বৈঠকের পর বললেন শি
এর আগে শির পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা পক্ষ তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু ইস্যুতে কিছু অগ্রগতি এবং মতৈক্য অর্জিত হয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি বিবৃতিতেও একই কথা বলা হয়।

শি বলেন, চীনা পক্ষের সঙ্গে ব্লিনকেনের খোলামেলা এবং বিস্তুারিত আলোচনা হয়েছে।

তিনি আশা করেন, এ সফরের মধ্যে দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে’ অবদান রাখতে পারবেন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশ করা একটি দুই মিনিটের ভিডিওতে একথা বলা হয়।
এ ছাড়া ব্লিনকেনের সফরের সময়ই আরো জানানো হয়েছে, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং আগামীতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন এবং দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ আরো বাড়ানো হবে।

অবনতিশীল চীন-মার্কিন সম্পর্ক
ব্লিনকেনের এই সফরটি ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে সন্দেহজনক চীনা গুপ্তচর বেলুন গুলি করে ধ্বংস করার ঘটনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি স্থগিত করা হয়। এ ঘটনাটি ছাড়াও বাণিজ্যবিষয়ক সংঘাত, মানবাধিকার ও তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাসহ অনেকগুলো কারণে গত কিছুকালের মধ্যে চীন-মার্কিন সম্পর্কের অব্যাহত অবনতি হচ্ছিল।

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই আজও বলেছেন, চীন-মার্কিন সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ‘মূল কারণ’ হচ্ছে তার দেশ সম্পর্কে আমেরিকার ‘ভুল ধারণা’।

এ প্রেক্ষাপটে ব্লিনকেনের এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছিল এবং এর দিকে সারা বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল।

ব্লিনকেন স্বীকার করেন, এ সম্পর্কে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছিল। তবে তিনি বলেন, এ সফরের ফলে দুই দেশের যোগাযোগ জোরদার হবে।

‘তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতার সুযোগ নেই’
এর আগে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইয়ের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক ঘণ্টা বেশি স্থায়ী হয়। ব্লিনকেন বলেন, তাইওয়ান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এক চীন নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না।

তবে তাইওয়ান প্রণালিতে চীনের ‘উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের’ বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি তিনি তুলেছেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওয়াং ই ব্লিনকেনকে বলেছেন, “তাইওয়ান নিয়ে ‘সমঝোতার কোন সুযোগ নেই’।”

তিনি আরো দাবি করেন, যেন যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর থেকে একতরফা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যাতে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপর ‘দমন চেষ্টা’ বন্ধ করে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে, সে আহ্বানও জানান ওয়াং ই।

‘দায়িত্বশীল প্রতিযোগিতা’
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের অবাধ চ্যানেল চালুর মাধ্যমে ‘দায়িত্বশীল প্রতিযোগিতা বজায়’ রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, যাতে প্রতিযোগিতা সংঘাতে পরিণত না হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্লিনকেন জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও মূল্যবোধের পক্ষে তিনি কূটনীতি চালিয়ে যাবেন। এ ছাড়া যৌথ উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেন তারা।

সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *