যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মানেই যেন এক মহারণ, যেখানে একটি ভোটই বদলে দিতে পারে বিশ্বরাজনীতির চেহারা। প্রতিটি ভোট গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিশেষ কিছু রাজ্য আছে যেগুলোর ভোটাররা শেষ মুহূর্তে ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এদেরই বলা হয় ‘সুইং স্টেট’। এবারও জর্জিয়া, মিশিগান, এবং পেনসিলভানিয়ার মতো সুইং স্টেটগুলোতে কে জয়ী হবে, তার দিকেই তাকিয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এই তিনটি রাজ্যের ভোটারদের মনোভাবই নির্ধারণ করতে পারে হোয়াইট হাউসের পরবর্তী বস, যার প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বে।
সুইং স্টেট কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সুইং স্টেটগুলোতে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের শক্ত অবস্থান থাকে না, যার ফলে এই রাজ্যগুলোর ভোটাররা একাধিক নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন দলকে সমর্থন করেন। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এই রাজ্যগুলোতে ভোটের দোলাচল সম্পূর্ণ ফলাফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। এই তিনটি রাজ্যের ভোটারদের ওপর নির্বাচনী প্রচারণার বিশাল বাজেট ও সময় ব্যয় হয়, কারণ এই রাজ্যগুলোতে জয় নিশ্চিত করতে পারলে প্রার্থীদের হোয়াইট হাউসের পথে অর্ধেক পথ পাড়ি দেওয়া হয়।
জর্জিয়া: পরিবর্তনের রাজ্য
রিপাবলিকানদের শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জর্জিয়া ২০২০ সালে প্রথমবার ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়। শহুরে এলাকা এবং নতুন ভোটারদের ভূমিকা এখানে বড় পরিবর্তন এনেছে। প্রার্থীরা জর্জিয়ার এই পরিবর্তিত ভোটার মনোভাবকে নিজেদের পক্ষে টানতে চেষ্টা করছেন বলে নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে জানা যায়।
মিশিগান: রুস্ট বেল্টের ভোটের শক্তি
মিশিগান ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাটিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও ২০১৬ সালে এটি রিপাবলিকানদের হাতে যায়। এখানে কর্মসংস্থান, শিল্পখাত ও অর্থনৈতিক ইস্যু প্রার্থীদের প্রতি ভোটারদের আস্থা নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে জানা যায়।
পেনসিলভানিয়া: প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দু
পেনসিলভানিয়া রুস্ট বেল্ট অঞ্চলের অন্যতম রাজ্য, যেখানে গ্রামীণ ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন রয়েছে। এটি এমন একটি রাজ্য যেখানে মধ্যবয়সী শ্রমজীবী এবং তরুণ ভোটাররা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভোট প্রদান করেন, যা নির্বাচনের ফলাফলে সরাসরি প্রভাব ফেলে বলে জানায় বিবিসি।
নির্বাচনে সুইং স্টেটগুলোর শক্তি: বিশেষ বিশ্লেষণ
এই তিনটি রাজ্য বাদে ফ্লোরিডা, উইসকনসিন ও নর্থ ক্যারোলিনার মতো রাজ্যও সুইং স্টেট হিসেবে বিবেচিত। তবে জর্জিয়া, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার অনিশ্চিত ভোটাররা নির্বাচনের ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। প্রার্থীরা এই রাজ্যগুলোর ভোটারদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্ব রাজনীতিতে সুইং স্টেটের প্রভাব
এই রাজ্যগুলোতে নির্বাচনের ফলাফল পূর্বানুমান করা কঠিন এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সমান থাকে। এই রাজ্যগুলোর ভোটারদের পরিবর্তনশীল মনোভাব মার্কিন প্রশাসনের বৈদেশিক নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
যদি একটি ডেমোক্র্যাটিক সরকার গঠিত হয়, তাহলে বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বেশি গুরুত্ব পাবে। অন্যদিকে, রিপাবলিকান সরকার হলে বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক চুক্তির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা সুইং স্টেটের নির্বাচনী ফলাফলের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যা আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, সুইং স্টেটের নির্বাচন কেবল মার্কিন রাজনীতিতে নয়, বরং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।