গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। জাতিসংঘ প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, এসব অস্ত্রের মধ্যে রাশিয়া থেকে কেনা হয়েছে ৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম। ২৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের অস্ত্র কেনা হয়েছে চীন থেকে। ২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের অস্ত্র কেনা হয়েছে সিঙ্গাপুর থেকে। ভারত থেকে কেনা হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের অস্ত্র এবং থাইল্যান্ড থেকে কেনা হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের অস্ত্র। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে আরও বলা হয়েছে, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করছে যেসব গ্রুপ তাদের বিরুদ্ধে আকাশপথে এবং ভারি অস্ত্র দিয়ে হামলা জোরালো করেছে সামরিক জান্তা।
যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ নৃশংসতার জন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও জান্তা সরকারের কাছে এসব অস্ত্রের সরবরাহ অব্যাহত আছে বলে মনে করছেন মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তদন্তকারী টম অ্যানড্রু। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেসামরিক এলাকায় আকাশপথে হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে রাশিয়ায় তৈরি এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান, ইয়াক-১৩০ জেট এবং চীনের কে-৮ জেট বিমান। টার্গেট করা হচ্ছে স্কুল, মেডিকেল স্থাপনা এবং বাড়িঘর।
টম অ্যানড্রু বলেন, ১১ই এপ্রিল জান্তা সরকার সামরিক শাসনের প্রায় ৩০০ বিরোধীর এক অনুষ্ঠানে ইয়াক-১৩০ জেট বিমান ব্যবহার করেছে হামলায়। আহতদের যারা উদ্ধার করতে এগিয়ে যান তাদেরকে টার্গেট করে এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়। ওদিকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধে একটি একক ঘটনায় শিশুসহ কমপক্ষে ১৬০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর দাবি, তারা বিদ্রোহীদের টার্গেট করেছে। সেখানে যদি কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়ে থাকেন তাহলে তারা বিরোধীদের সমর্থক অথবা সন্ত্রাসী।
জাতিসংঘের হিসাবে গত দু’বছরে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী কমপক্ষে ৩৫০০ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কমপক্ষে ৭০ হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে গেছেন। অস্ত্র কেনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে টম অ্যানড্রু বলেছেন, মিয়ানমারের এসব অস্ত্র কেনা নিয়ে ১২,৫০০ ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে। এসব অস্ত্র সরাসরি সামরিক বাহিনী অথবা সামরিক জান্তার জন্য কাজ করছে এমন অস্ত্রের ডিলারদের কাছে সরবরাহ দেয়া হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাশিয়ার সরকারি এবং বেসরকারি ২৮টি কোম্পানি মিয়ানমারকে যুদ্ধবিমান এবং খুচরা যন্ত্রপাতি, অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ড্রোন, হেলিকপ্টার ও অন্যান্য ব্যবস্থা সরবরাহ দিয়েছে।
চীন ও হংকংয়ের সরকারি এবং বেসরকারি কমপক্ষে ৪১টি কোম্পানি একই কাজ করেছে। তবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছে অস্ত্র হস্তান্তরের অনুমতি সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডের সরকার দিয়েছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভারত জানিয়েছে আগের বেসামরিক সরকারের অধীনে চুক্তির অংশ হিসেবে ওই অস্ত্র সরবরাহ দেয়া হয়েছে মিয়ানমারকে। এর মধ্যে ভারতের সরকারি এবং বেসরকারি মিলে ২২টি প্রতিষ্ঠান উপকূলীয় নজরদারি ব্যবস্থা, রিমোট কন্ট্রোল অস্ত্র ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতকারক, ১২২ এমএম ব্যালে সরবরাহ দিয়েছে।