ফার্মগেটে পাপিয়ার আরেকটি আস্তানার সন্ধান

প্রধান সংবাদ বাংলাদেশ

গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) হুমকি দিয়ে যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ বলেছেন, ‘বেশি চাপাচাপি করবেন না, করলে সব ফাঁস করে দেব।’

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদকালে পাপিয়া বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে ১০ কোটি টাকার ওপর খরচ করেছি। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগাতে প্রায় চার কোটি টাকা খরচ করেছি। দলীয় পদ পেলেও এমপি মনোনয়ন পাই নি।

পাপিয়া আরও বলেন, ‘মনোনয়নের ব্যাপারে যারা টাকা নিয়েছিলেন তারা টাকা ফেরত দেন নি।’

তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে প্রতারণার যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি আমিই প্রতারণার শিকার হয়েছি। তাই পরবর্তী সময়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেছি।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া বেশ কয়েকজনের নামও বলেছেন। তবে এসব নাম প্রকাশ করতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রাজি হন নি।

এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পাঁচ তারকা হোটেলের বাইরে পাপিয়ার আরেকটি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে ডিবি। রাজধানীর ফার্মগেটের ২৮ ইন্দিরা রোডে বহুতল ভবনের তৃতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তিনি।

মাসে অর্ধলক্ষাধিক টাকা ভাড়া দিলেও ওই ফ্ল্যাটে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল না। ফ্ল্যাটটিতে মাঝেমধ্যে আমোদ ফুর্তির আসর বসত। সেখানে অনেক নেতা ও আমলা আসতেন বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন পাপিয়া।

ইতোমধ্যে ডিবি পুলিশ ওই ফ্ল্যাট পরিদর্শন করেছে। একই সঙ্গে ভবনটির কেয়ারটেকারের সঙ্গেও পুলিশ কথা বলেছে।

কেয়ারটেকারের উদ্ধৃতি দিয়ে ডিবি পুলিশ জানায়, মাঝে মধ্যে রাত ১২টা থেকে ১টার দিকে সাত থেকে আটজন নারী নিয়ে ফ্ল্যাটটিতে আসতেন পাপিয়া।

কোনদিন নিজের গাড়িতে করেই তিনি আসতেন, আবার কোনদিন অন্য কেউ এসে তাকে নামিয়ে দিয়ে যেতেন। যেদিন রাতে আসতেন সেই দিন রাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত তিনি সেখানে থাকতেন।

ভবনটির কেয়ারটেকার জানান, ‘পাপিয়া ম্যাডাম অনেক সময় বড় স্যারদের নিয়ে আসতেন।’ এসব স্যারের কয়েকজনের নামও বলেছেন কেয়ারটেকার।

রিমান্ডে পাপিয়া আরও জানান, নরসিংদী থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) পদে মনোনয়ন পেতে ঢাকা মহানগর যুব মহিলা লীগ, কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন নেতাকে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।

মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তারা পাপিয়াকে আশ্বস্তও করেছিলেন। তিনি বলেন, বড় এ বিনিয়োগের পর মনোনয়ন না পেয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পাপিয়া বলেন, বড় এ বিনিয়োগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন পেতে যাদের মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছিলেন ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেছেন। ব্ল্যাকমেইল করতে পাপিয়া দেশি-বিদেশি সুন্দরী তরুণীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তিন দিন ধরে পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কখনও এককভাবে আবার কখনও দুজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তাদের দুই সহযোগী সাব্বির ও তায়্যিবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা।

২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় পাপিয়া ও স্বামীসহ চারজনকে আটক করে র‌্যাব-১।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‌্যাব সদস্যরা ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে পাপিয়া-মফিজুরের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক বই, বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে।

এ সময় অবৈধ একটি বিদেশি পিস্তল এবং দুটি ম্যাগাজিনে ২০ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়।

এ ব্যাপারে পৃথক তিন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাপিয়া দম্পতি ছাড়াও তাদের দুই সহযোগী ১৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *