দেশে দেশে রেমিট্যান্স শাটডাউনের আহ্বান, প্রবাসী আয়ে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

অর্থনীতি প্রধান সংবাদ প্রবাস বাংলাদেশ

প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে এসেছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ। তবে ইন্টারনেট বন্ধ ও দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ ও কারফিউর প্রেক্ষাপটে চলতি জুলাইয়ে এতে পতনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২৪ জুলাই পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৯৮ কোটি ডলার এসেছিল প্রথম ১৩ দিনে। আর ১৪ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৫৩ কোটি ডলার। যেখানে গত মাসে (জুন) প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সংঘটিত সহিংসতা, মৃত্যু ও ইন্টারনেট বন্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছে তাদের একাংশ। এ পরিস্থিতিতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে জুলাইয়ে আসা রেমিট্যান্স হতে পারে চলতি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক মনে করছেন, হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে যে প্রচার চলছে, প্রবাসীরা তাতে সাড়া দেবেন না। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলেই দেশে রেমিট্যান্স পাঠাবেন বলে তিনি আশাবাদী।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র বণিক বার্তাকে জানান, ‘২৪ জুলাই পর্যন্ত ১৫০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। তবে এ হিসাব কিছুটা বাড়তেও পারে। কারণ টানা পাঁচদিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার ব্যাংক খুললেও কার্যক্রমের পরিসর ছিল খুবই ছোট। ব্যাংকগুলো কেবল নগদ জমা ও উত্তোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স এলেও সেটি পুরোপুরি রিকনসিলিয়েশন হয়নি। ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে এলে মাসের শেষের দিকে রেমিট্যান্সের পুরো হিসাব পাওয়া যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছিল মার্চে। ওই মাসে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর আগে জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। আর মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। সর্বশেষ জুনে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা গত ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির মাধ্যমে। দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি আহরণ করে ব্যাংকটি। ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর বুধ ও বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলেছে। এ দুইদিনে যেসব রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, সেগুলো বন্ধের সময় পাঠানো। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর ক্যাম্পেইনের বিষয়ে আমরাও শুনেছি। এ ক্যাম্পেইনের প্রভাব আগামী সপ্তাহে বোঝা যাবে।’

দেশের আরো তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী জানিয়েছেন, টানা পাঁচদিন ব্যাংক বন্ধ থাকার পর বুধ ও বৃহস্পতিবার যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসার প্রত্যাশা ছিল, সেটি দেখা যায়নি। প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে হলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। চাকরিজীবী প্রবাসীরা মাসের প্রথম কিংবা শেষ সপ্তাহে বেতন পান। এ সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়লে বুঝতে হবে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত টানা এক সপ্তাহের সহিংসতা ও সংঘর্ষে অন্তত ২০৬ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। এরপর সীমিত পরিসরে চালু হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি ইন্টারনেট সেবা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ জারির পাশাপাশি দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার। দেশে সংঘটিত সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও এখন এক ধরনের উত্তেজনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ, আমেরিকার কয়েক দেশে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রবাসীরা সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে কোনো কোনো সমাবেশ থেকে রেমিট্যান্স ‘শাটডাউনের’ ঘোষণাও এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা গত কয়েক দিন পরিবারের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ করতে পারেননি। এ বিষয়টি তাদের বড় একটি অংশকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এমনই এক প্রবাসী জয়দেব কর্মকার। সৌদি আরবে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাংক আর বিকাশে টাকা পাঠাই বেশি। যে পরিস্থিতি হয়েছে; তাতে আগামী দুই-এক মাসে কেউ টাকা পাঠাবে না। পাঠালেও হয়তো বিকাশে পরিবারের খরচের টাকা পাঠাতে পারে। এছাড়া কোনো টাকা পাঠাবে না। ১০ দিন ধরে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই, সন্তানদের দেখতে পারিনি। ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছে। মানুষের মনের মধ্যে একটা ক্ষোভ আছে। এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার দরকার ছিল না। আমরা প্রবাসে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌কারো বাবা, ভাই মারা গেছে, কেউ অসুস্থ হয়েছে। আগে থেকে অসুস্থ কারো সম্পর্কেও এ সময় কোনো খোঁজখবর নেয়া যায়নি। এজন্যই প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বেশি জমেছে। অনেকেই দুই-এক মাস ব্যাংকে টাকা না-ও দিতে পারে।’

শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের একাংশও অনেকটা একই ধরনের বক্তব্য রাখছেন। সৌদি প্রবাসী জয়দেব কর্মকারের মতো অনেকটা একই বক্তব্য রেখেছেন ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশী আইনজীবী মুনাওয়ার হোসেনও। তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সসহ পুরো ইউরোপে বাংলাদেশীরা বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে। এখানে যেকোনো ধরনের মিছিল-সমাবেশ ও মতপ্রকাশের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা রয়েছে। ফ্রান্স প্রবাসীদের আপাতত দেশে সরাসরি রেমিট্যান্স না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন হলে অন্য কোনো পন্থায় পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই। এটি শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদ।’

দেশে রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ আসে এজেন্ট ব্যাংকিং বা এমএফএস সেবা ব্যবহার করে। এসব সেবার অন্যতম বিকাশ। বিভিন্ন জেলায় বিকাশ এজেন্টদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ১৮ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সেবাটি ব্যবহার করে কেউ রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেননি।

লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের গার্লস স্কুলসংলগ্ন মায়া টেলিকমের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ আলম রাসেল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে নেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে প্রবাস থেকে লেনদেন হয়নি। এখন লেনদেন শুরু হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি মাসে গড়ে বিকাশে প্রায় ৪০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। এ মাসে তা অর্ধেকে নেমেছে। আগে যেখানে ২ লাখ টাকা লেনদেন হয়, সেখানে তা অর্ধেকের নিচে নেমেছে।’

এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) সম্প্রতি ৫৭ বাংলাদেশীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়ার বিষয়টিও রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অন্যান্য দেশে যারা বিক্ষোভ করেছেন, তাদের মধ্যে আটক আতঙ্ক কাজ করছে। এমনকি অনেকে কর্মস্থলে যেতে শঙ্কাবোধ করছেন। ওইসব দেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা জানান, ইউএই ছাড়াও সৌদি আরবের রিয়াদ, কাতারের দোহা, লেবাননের বৈরুত ও ওমানের সালালাহ শহরে বড় ও ছোট আকারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন অনেকে।

এর মধ্যে ১৯ জুলাই বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে মিছিল করায় ইউএই ছাড়াও দুয়েকটি দেশে কয়েকজনকে আটকের গুঞ্জন ওঠে বলে জানা গেছে। তবে সেগুলোর সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

রিয়াদে অবস্থানরত বাংলাদেশী নির্মাণ শ্রমিক রেজাউল রনি (ছদ্মনাম) বলেন, ‘এখানে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষেধ। তারপরও কিছু একটা হলেই লোকজন মিছিল নিয়ে নেমে পড়ে। বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনার সমর্থনে মিছিল হয়েছে। তবে ইউএইতে কারাদণ্ডের ঘটনায় এখন রিয়াদে প্রবাসীদের মধ্যেও আটক আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

লেবাননের বৈরুতে ২১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে দোয়া মাহফিল ও মানববন্ধন করে সেখানে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশী। ইউএইর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তা বড় আকারে রূপ নেয়নি। এর পরও সেখানকার সরকার প্রবাসীদের বিষয়ে এ ধরনের মানববন্ধনে কোনো ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় কিনা, সে বিষয়েও শঙ্কা রয়েছে প্রবাসীদের মধ্যে।

বৈরুতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী শাহ মারুফ (ছদ্মনাম) বলেন, ‘এখানে তেমন কোনো আন্দোলন হয়নি। তবে প্রবাসীদের বড় একটি অংশের মধ্যে এক ধরনের চেষ্টা ছিল।’

কাতারেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে আন্দোলন ও মিছিল করেছে সেখানকার প্রবাসীরা। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক হয়েছেন কিনা সেটা জানা যায়নি। সেখানকার প্রবাসীদের মধ্যেও এখন আটক আতঙ্ক কাজ করছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ওই বিক্ষোভের দায়ে ৫৭ বাংলাদেশীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার। এর একদিন পরই বাংলাদেশীদের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা বন্ধ করে দেশটি। এরপর কর্মী ভিসা প্রক্রিয়াকরণ শুরু হলেও ট্যুরিস্ট ভিসা এখনো বন্ধ রয়েছে।

এ ঘটনার একদিন পর ২০ জুলাই আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল বিবৃতি দিয়ে প্রবাসীদের এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী সব প্রবাসী বাংলাদেশীকে স্থানীয় আইন ও বিধিবিধান মেনে চলতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

এরপর ২৪ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশীদের আইন মেনে চলার পরামর্শ দেন। সতর্ক করে বলেন, ‘আন্দোলন করে তারা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রবাসীদের ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বাংলাদেশ। এটি ওই দেশের রাষ্ট্রীয় বিষয়।’

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান উৎস রফতানি খাত হলেও রেমিট্যান্সের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশের রফতানি আয় ছিল ৩ হাজার ৭৩৪ কোটি বা ৩৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে প্রবাসীরা ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৩৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের বিপরীতে অন্তত ৩০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় মাত্র ৬-৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু রেমিট্যান্স হিসেবে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে যে অর্থ পাঠান তার বিপরীতে দেশের কোনো ব্যয় নেই। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পুরোটাই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও মনে করছেন, ‘এমনিতেই দেশের অর্থনীতি মারাত্মক চাপে আছে। গত তিন বছর দেশে ডলারের সংকটও তীব্র। এ পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ডলার সংকট ও বিনিময় হারের সমন্বয়হীনতার কারণে দেশে হুন্ডির বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডিকে অগ্রাধিকার দিলে অর্থনৈতিক সংকট আরো ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছাবে। দেশের বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি আরো বেশি উসকে উঠবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *