চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ‘খোলাখুলি ও গঠনমূলক’ আলোচনা করেছেন ব্লিঙ্কেন

যুক্তরাষ্ট্র

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বেইজিংয়ে তার সফরের দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ দিন রোববার এই বৈঠক আয়োজিত হয়। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, এই সফরের আসল উদ্দেশ্য ছিল চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা হ্রাস করা। আলোচনায়ও এ বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আলোচনা শেষে ব্লিঙ্কে জানিয়েছেন, খোলাখুলি, বাস্তবসম্মত ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেন এই দুই কূটনীতিক। এরমধ্যে তারা খাবার খান এবং বেশ কিছু ইস্যুতে বিস্তারিত কথা বলেন। রোববার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা সিএনএন-কে জানিয়েছেন যে, বেশ কিছু ফ্রন্টেই আলোচনা বহুদূর এগিয়েছে। দুই পক্ষই উত্তেজনা হ্রাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তবে একইসঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে গভীর পার্থক্যও চোখে পড়েছে।

চীনের তরফ থেকে এই আলোচনাকে অকপট ও গভীর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। উভয় পক্ষই আগাম সংলাপ, বিনিময় এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।

সামনেই এ ধরণের আরও বৈঠক আয়োজিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে চীন। কিন গ্যাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাইওয়ানের প্রতি মার্কিন নীতি স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাইওয়ান চীনের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ যা নিজের স্বাধীনতা দাবি করে। তবে চীন ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা কোনো দেশই তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়না।
এদিকে ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, গুপ্তচর-বেলুনকাণ্ডের পাঁচ মাস পর চীন সফর করেন ব্লিঙ্কেন। বেলুনকাণ্ডের জেরে তিনি আগের সফর বাতিল করেছিলেন। চীন সফরকালে ব্লিঙ্কেন চীনের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন ও তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে দেখা হতে পারে বলে আগে থেকেই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। গত শুক্রবার শি জিনপিং দিনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন মাইক্রোসফটের কর্তা বিল গেটসের সঙ্গে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে যেমন বড় তালিকা আছে, তেমনই বিরোধের তালিকাটাও কম বড় নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্লিঙ্কেনের সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় ব্লিঙ্কেন কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আলোচনার প্রক্রিয়া কখনো বন্ধ করা উচিত হবে না।

বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ব্লিঙ্কেনের এটাই প্রথম চীন সফর। আর গত পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনে পা রাখলেন। সম্প্রতি তাইওয়ান নিয়ে দুই দেশের বিরোধ সামনে এসেছে। সেমিকন্ডাক্টর শিল্প নিয়েও দুই দেশের প্রতিযোগিতা তুঙ্গে উঠেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সিসিটিভি জানিয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছেন যে- দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরুর পর কূটনৈতিক দিক থেকে এতটা খারাপ অবস্থা এর আগে কখনো হয়নি। এর ফলে দুই দেশের সাধারণ মানুষের মৌলিক স্বার্থ রক্ষা করা যাচ্ছে না, আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রত্যাশাও পূরণ হচ্ছে না।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী হুয়া চুনইং টুইট করে বলেছেন, ‘আশা করছি, এই আলোচনার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আবার পুরনো জায়গায় ফিরবে। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট এই আশাই করেছিলেন। তবে আলোচনার পর ব্লিংকেন বা কিন কেউই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। চীন যাওয়ার আগে ব্লিংকেন বলেছিলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। তিনি চান, তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যেই উপযুক্ত কূটনীতি নিয়ে আগাতে। নাহলে তীব্র প্রতিযোগিতা অনেক সময়ই বিরোধের জন্ম দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *