রোহিঙ্গা গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দায়ের করা গাম্বিয়ার মামলায় মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তি খারিজ করে দিয়েছেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত। শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস-আইসিজে) এ রায় দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, এই রায়ের পর গণহত্যা নিয়ে গাম্বিয়ার করা মামলা চলতে আর কোনো বাধা থাকল না।
স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করেছিল আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। মামলায় বলা হয়েছিল, মিয়ানমারে সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে গণহত্যার ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তির ওপর শুনানি শুরু হয়। এই শুনানি চলে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গত শুক্রবার অর্থাৎ ২০২২ সালের ২২ জুলাই মিয়ানমারের আপত্তি নাকচ করে দিলেন আদালত।
এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের রায়ে মিয়ানমারের চারটি প্রাথমিক আপত্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এই রায় রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বৈধ অধিকার পুনরুদ্ধার করে মিয়ানমারে তাদের নিজভূমে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এই রায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। আমরাও মনে করি, আলোচ্য রায় আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টির সত্যতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। এ পর্যায়ে আমরা আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মামলা করার জন্য গাম্বিয়ার কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিতে এবং একই সঙ্গে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করতে চাই।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টিকে আড়াল করতে চেয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কল্যাণে তারা এতে সফল হয়নি, সর্বশেষ আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতেও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন-হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ হওয়ার মধ্য দিয়ে এখন মামলার শুনানি চলতে আর কোনো বাধা থাকল না।
এখন দেখার বিষয় চলমান মামলার পরিণতি কী দাঁড়ায়। আমরা আশা করতে চাই, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত শেষ পর্যন্ত এমন রায় প্রদান করবেন, যাতে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক সংঘটিত সব ধরনের অপরাধ বিশ্বসমাজে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠবে। তবে সবচেয়ে যা জরুরি, তা হলো রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়াতে অনুরোধ করব আমরা। কারণ এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বিশ্বসভ্যতার সংকটও বটে।