কোভিডের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ স্বাদ ও ঘ্রাণের সমস্যায়

আন্তর্জাতিক

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দীর্ঘকালীন ঘ্রাণ ও স্বাদের সমস্যায় ভুগছে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ। গবেষণা বলছে, নারীরাই সবচেয়ে বেশি এ সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

বিএমজেতে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য বলছে, কভিড-১৯-এ আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের ৫ শতাংশের ঘ্রাণ ও স্বাদের অনুভূতিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন দেখা দেয়। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে ৫৫ কোটি মানুষ। তথ্য বলছে, তার মধ্যে দেড় কোটি মানুষের দীর্ঘমেয়াদি ঘ্রাণের ঘাটতি এবং ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের স্বাদের সমস্যা থাকতে পারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ছয় মাস পরেও। কেউ কেউ ভুগছে এ দুটি সমস্যাতেই।

ঘ্রাণ ও স্বাদ হারিয়ে ফেলার মতো সমস্যার ব্যক্তির জীবন ও ভালো থাকার মানের ওপর ভয়াবহ প্রভাব রয়েছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের ওপরও সেটার বেশ বড় প্রভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক গবেষকরা।

ঘ্রাণ ও স্বাদের অনুভূতি হারিয়ে ফেলা বা বদলে যাওয়াটা তীব্র কষ্টের দিকে ধাবিত করতে পারে। গবেষকরা বলছেন, দৈনিক কিছু কর্মকাণ্ড যেমন কফির স্বাদ নেয়া বা খাবারের স্বাদ গ্রহণের বিষয়গুলোও তখন বিরক্তিকর ও মানসিকভাবে পীড়াদায়ক হয়ে উঠতে পারে।

৩ হাজার ৬৯৯ জনের অংশগ্রহণে ১৮টি গবেষণা পর্যালোচনা করা হয় এ গবেষণায়। কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ছয় মাস পরেও কতজন মানুষ বদলে যাওয়া ঘ্রাণ ও স্বাদের সমস্যায় ভুগছে তা তুলে আনার জন্য মডেলিং ব্যবহার করেন গবেষকরা।

উপসংহারে তারা বলেন, আনুমানিক ৫ দশমিক ৬ শতাংশ রোগীর ঘ্রাণশক্তির কর্মহীনতা এবং ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বদলে যাওয়া স্বাদের সমস্যায় ভুগেছে কমপক্ষে ছয় মাসব্যাপী।

এ পরিস্থিতি থেকে যতটা সহজে পুরুষরা উত্তরণ করতে পেরেছে নারীদের সেক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লেগেছে। তাছাড়া যেসব রোগী প্রাথমিকভাবে গন্ধ কমার তীব্রতায় ভুগেছে বা যাদের নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা আছে তাদেরও এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে বেশ সময় লেগেছে। একজন নারী রোগী গবেষকদের জানান, তার প্রথমবারে সংক্রমিত হওয়ার পর ২৭ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। এখনো ঘ্রাণের সমস্যা ঠিকঠাক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।

গবেষকরা এ গবেষণার বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন। গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের মান বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং নিজের বলা কথার ওপরই বেশি নির্ভর করা হয়েছে। তার পরও তাদের মতে, এখানে কিছু ভুল গণনা হয়ে থাকতে পারে। হয়তো ঘ্রাণজনিত কর্মহীনতার পরিমাণ আরো বেশি।

ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির প্রফেসর ড্যানি অল্টম্যান এ গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি বলেন, এটি খুবই শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। কভিড-১৯-এর কারণে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণে অন্তর্নিহিত অসুবিধার বিষয়ে আমাদের আবারো সতর্ক করবে এ গবেষণা।

তিনি যোগ করেন, তবে কভিডের কারণে দীর্ঘকালীন যেসব পরিবর্তন আসে সেগুলো আমরা কীভাবে বিশ্লেষণ ও চিহ্নিত করব সেই বিস্তৃত আলোচনারই একটি অংশ এটি। জীবনের মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঘ্রাণ ও স্বাদের সমস্যা মোটেও তুচ্ছ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *