দেশে আর কালো টাকা তৈরি করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন থেকে বেছে বেছে ঋণ নেবে বাংলাদেশ। বাজেটের বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। অনেক পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসছে, সুতরাং বাজেট সংশোধন হবে।
বিদেশি ঋণ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের এসব প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণ বেছে নেব, ঋণের বোঝা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ আমাদের অনুদান দেয়, এগুলো নেওয়া হবে। এক বছরের প্রকল্প পাঁচ বছর, এসব প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে না।’
জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সহযোগী ৪১টি সংস্থা দেখা করেছে। আমাদের অর্থনৈতিক, সমতাভিত্তিক উন্নয়নে তারা পাশে থাকবে। তাদের পরামর্শ শুনলাম। সমতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন করব। রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে নিজ ভূমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।’
ঢাকা শহরে আন্দোলন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছে, তাদের ইগনোর করতে পারি না। বৈষম্য ইগনোর করতে পারব না, তাদের ইগনোর করতে পারি না। যারা মাঠে আন্দোলন করছে, তাদের বেদনা আছে। এত দিন কেউ বলতে সাহস করেনি। আমাদের সরকারের বয়স বেশি না। যারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তাদের বিষয়টা আমাদের বিবেচনায় আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমন ধান কীভাবে সংগ্রহ করা যায়, এটা নিয়ে কাজ করছি। নারী স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছি।’ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কাজ করবেন বলে তিনি জানান।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫ বিলিয়ন ঘুষ নেওয়ার তথ্য গুজব একই দিনে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের আগে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৫ বিলিয়ন ডলার ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের (৫৯ হাজার কোটি টাকা) বেশি আত্মসাৎ করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কাজে সহায়তা করেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। গত শনিবার গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘নির্বাচনের আগে থেকে এই গুজবটা তৈরি করা হয়েছে। আমরা কি এতই ক্রেজি হয়ে গেছি একজনকে ৫ বিলিয়ন দেব। একটা প্রকল্প শুরু হলো আর ৫ বিলিয়ন দিয়ে দিলাম। এটা রিউমার ও মিথ্যা।’
প্রকল্পের কাজ অব্যাহত আছে : জাপানি রাষ্ট্রদূত
বিদেশি ঋণের অর্থছাড়ের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে জাপান। সদ্যবিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ ডলার ছাড় করেছে দেশটি। এখন শুধু জাপানি অর্থায়নে ১২টি প্রকল্পের কাজ চলছে। টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের প্রজেক্ট ৩৬টি।
এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়েও প্রকল্পগুলোর কাজ অব্যাহত রেখে যথাসময়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়োমা কিমিনোরি।
গতকাল শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এমন আশ্বাস দেন জাপানি রাষ্ট্রদূত।
এ ছাড়া চলমান প্রকল্প সম্পন্ন করা এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাসও দেন রাষ্ট্রদূত।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবং অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।’
উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রাষ্ট্রদূতকে বলেন, জাপান সব সময়ই বাংলাদেশের ভালো বন্ধু এবং বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার। তিনি কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নে এবং বাংলাদেশিদের জাপানে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি প্রদান অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাপানের পথচলা শুরু হয় ১৯৭৩ সালের মার্চে।